এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে চিঠি দিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তথ্য গোপন করলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ধারা ২৩ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬০ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং হয়েছে - অগ্রণী ব্যাংক |
তবে অগ্রণী ব্যাংক তদন্ত করে বলছে, অগ্রণী ব্যাংকের কোনো শাখা সিঙ্গাপুরে এই হিসাবে কোনো অর্থ পাঠায়নি। এ ছাড়া এইচএসবিসি ব্যাংকের সঙ্গে ২০১২ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ব্যাংকটির হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো ধরনের লেনদেন হয়নি।
জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এইচএসবিসির সঙ্গে আমাদের কোনো হিসাব চালু নেই। তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেনের সুযোগও নেই। আমরা বিষয়টি সব শাখায় খোঁজ নিয়ে দেখেছি।’
ইন্টারপোল থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৩ জুলাই অগ্রণী ব্যাংক প্রেরক হিসেবে এইচএসবিসি ব্যাংকের যুক্তরাষ্ট্র শাখার মাধ্যমে ৭৫ লাখ ডলার আল মুস্তাফা রেস্টুরেন্ট পিটিই লিমিটেডের হিসাবে পাঠিয়েছে। আল মুস্তাফা রেস্টুরেন্ট সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। এটি ২০০০ সালের ৬ মে নিবন্ধিত হয়। এর পরিচালক হিসেবে আছেন তরিকুল ইসলাম ও নাইমুন নাহার আহাদ। ইন্টারপোল চিঠিতে বলেছে, এর মাধ্যমে মানি লন্ডারিং বা অর্থের অবৈধ লেনদেন হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরের ২৯ ডেস্কার রোডে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধিত ঠিকানা। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশি মালিকানাধীন। এতে ভারতীয়, বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি খাবার পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ডে বাংলায় লেখা রয়েছে, ‘অভিজাত বাংলাদেশী রেস্তোরাঁ’।
অগ্রণী ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে সিআইডি বলেছে, অগ্রণী ব্যাংক কীভাবে এতগুলো বৈদেশিক মুদ্রা এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে আল মুস্তাফার বরাবর পাঠালো, তা দ্রুত অনুসন্ধান করে দেশের স্বার্থে জানা প্রয়োজন। এ ছাড়া এসব ডলার বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে যথাসময়ে লিখিতভাবে (এসটিআর) অবগত করা হয়েছে কি না, তা প্রমাণের জন্য যাবতীয় তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপকের কাছেও।
সিআইডি চিঠিতে বলেছে, ব্যাংক কোনো গাফিলতি অথবা তথ্য গোপন করলে এবং মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে যথাসময়ে অবহিত করা না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি ইন্টারপোল-সংক্রান্ত এবং অতীব জরুরি।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই তদন্ত করে সিআইডিকে অগ্রণী ব্যাংক জানিয়ে দেয় যে চলতি বছরের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত কোনো লেনদেন হয়নি। অগ্রণী ব্যাংক আরও জানায়, এ ছাড়া ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে হিসাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ রকম লেনদেনের কোনো সম্ভাবনাও নেই।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপীই অর্থ পাচারের বিষয়টি এখন ব্যাপকভাবে আলোচিত। গবেষণা অনুযায়ী, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার, টাকার অঙ্কে যা ৪ লাখ ৪১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এর বাইরে সুইস ব্যাংকসমূহে বাংলাদেশি নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বাড়ছে। আর এখন অভিযোগ উঠল অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাচারের।
0 comments:
Post a Comment