কমেন্ট্রি
বক্সে আর্তনাদ করে উঠলেন বাংলাদেশের
সাবেক ক্রিকেটার আতহার আলী খান। ভুলটা
কোনো ভাবে মেনে নিতে
পারছিলেন না তিনি।
তাও সেটি করেছেন সাকিব
আল হাসান। ১৫তম
ওভারে মাশরাফির দ্বিতীয় বলে ৫৩ রান
করা নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ডিপ মিড উইকেটে
বলটি উড়িয়ে মারলেন।
ক্যাচ ধরেও ছিলেন সাকিব,
কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা
ফসকে গেল হাত থেকে।
কমেন্ট্রি বক্সে আর্তনাদ করে উঠলেন বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার আতহার আলী |
ব্ল্যাকক্যাপদের
স্কোর বোর্ডে তখন ১০৮
রান ৩ উইকেট হারিয়ে। আরো
একবার মাশরাফির বলে জীবন পান
কিউই অধিনায়ক তামিম ইকবালের ভুলে। আতহার
আলীর আর্তনাদের কারণ ছিল ক্যাচ
দুটি নিতে পারলে নতুন
ব্যাটসম্যান ক্রিজে এসে চাপে
পড়তো। কিন্তু
তা হলো না।
অধিনায়ককে প্রথমবার জীবন পেতে দেখে
খোলস ছাড়লেন কোরি অ্যান্ডারসন। এক
ছয় ও চারে ১৮
বলে ২৩ রান থেকে
করলেন ৪১ বলে ১০
ছয় ও ২ চারে
অপরাজিত ৯৪ রান।
অধিনায়ক ৬০ রানে আউট
হলেও স্কোর বোর্ডে ১৯৫
রান ৪ উইকেট হারিয়ে। আস্থাও
ছিল, বিশ্বাসও ছিল। শুরুটা
দেখে মনেও হয়েছিল পারতেও
পারেন তারা। কিন্তু
না।
বাংলাদেশের
ক্রিকেটাররা দ্রুতই মাথা নোয়ালেন
ফের। বাজে
বোলিং-ফিল্ডিংয়ের পর একই চিত্রনাট্য
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়েও। দারুণ
শুরুর পর আশার আলো
জ্বেলে ধপ করে নিভে
যাওয়া। সৌম্য
সরকার ও সাকিবের লড়াইয়ে
প্রাপ্তি শুধু পরাজয়ের রান
ব্যবধান। আগের
ম্যাচে ৪৭ রানে হেরে
সিরিজ খোয়ায় বাংলাদেশ।
তৃতীয় ম্যাচে ২৭ রানে
হেরে হোয়াইটওয়াশ টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডের
মাটিতে আগের কোনো ফরমেটে
জয় ছিল না টাইগারদের। এবার
ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে
সেই ইতিহাস পরিবর্তনের সুযোগ
এসেছিল। কিন্তু
সেই সুযোগ হাতছাড়া হলো
দুটি হোয়াইটওয়াশের লজ্জা নিয়ে।
এখনো টেস্ট সিরিজ বাকি। হারের
বাক্সে বন্দি বাংলাদেশের জন্য
টেস্টে আরো বড় লজ্জা
অপেক্ষা করছে কি না
তা সময়ই বলে দেবে।
দ্বিতীয়
টি-টোয়েন্টির ফটোকপি দিয়েই শুরু
হয়েছিল শেষ ম্যাচটি।
একই মাঠে টসে জিতলেন
বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিলেন
ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তও। ব্যাট
করতে নেমে আগের ম্যাচে
৪৪ রানে ৩ উইকেট
হারানো নিউজিল্যান্ড গতকাল সমান উইকেট
হারালো ৪১ রানে।
সেই ম্যাচে চতুর্থ উইকেটের
জুটিতে এসেছিল ১২৩ রান। গতকাল
হলো ১২৪ রান।
সেই ম্যাচে কেন উইলিয়ামসনের
শহরে নায়ক হয়েছিলেন কলিন
মানরো সেঞ্চুরি করে। এই
ম্যাচে অ্যান্ডারসন সেঞ্চুরি না পেলেও অধিনায়কের
সামনেই নায়ক হলেন।
অথচ এই ব্যাটসম্যান ২০১৬
সালের মার্চে দেশের হয়ে
শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ
খেলেছিলেন ভারতের বিপক্ষে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই সময় বাংলাদেশের
বিপক্ষে তিনি করেছিলেন ৪
রান। এমনকি
এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪
ও দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩ করে
আউট হয়েছিলেন। তবে
তার গত বছরটি শুরু
হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮২ রানের অপরাজিত
ইনিংস দিয়ে। এরপর
কোনো ফিফটির দেখা না
পেলেও ২০১৭ শুরু করলেন
বাংলাদেশের বিপক্ষে ৯৪ রানের অপরাজিত
ইনিংস দিয়ে। এ
দিন তিনি ছাড়িয়ে গেছেন
ম্যাককুলামের ৮ ছক্কার রেকর্ডও।
উইলিয়ামসনের
জীবন পাওয়ার ওভারে অ্যান্ডারসন
মাশরাফির বলে, একটি চারের
পর দুটি ছয়ের মার হাঁকিয়ে
চাপ উড়িয়ে দিতে শুরু
করলেন। এরপর
সৌম্য সরকারের উপর ভরসা করে
বল দিলেন অধিনায়ক।
কিন্তু সেই ওভারে হাঁকালেন
৩টি ছয়ের মার।
২৭ বলে তুলে নিলেন
২৮ ম্যাচের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। সেখানেই
থামলেন না। পরের
১৩ বলে করলেন ৪৪
রান। ভাগ্যিস
নিউজিল্যান্ডের নির্ধারিত ওভার শেষ হয়ে
গিয়েছিল। নয়তো
ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি
সেঞ্চুরির জন্য ৬ রানের
আফসোসটাও করতে হতো না। অবশ্য
এর আগে ৫৭ বলে
৬০ রান করে ক্যারিয়ারের
সপ্তম ফিফটি তুলে নেয়া
উইলিয়ামসনকে থামিয়ে টাইগারদের সেরা
বোলার রুবেল হোসেন।
৩১ রানে তিনি নিয়েছেন
৩টি উইকেট। শুরুতেই
তিনি নিশাম ও ভয়ঙ্কর
মানরোকে আউট করেছিলেন।
রুবেল
ছাড়া বাকি বোলারদের অবস্থা
খুবই খারাপ। অধিনায়ক
মাশরাফি আঙুলে চোট পেয়ে
মাঠ ছাড়ার আগে ৩.২ ওভার বল
করে দিয়েছেন ৪২ রান।
তার নামের পাশে উইকেট
যোগ হতে দেননি সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান
ও তামিম ইকবাল।
মোস্তাফিজের বিশ্রামের সুযোগে দলে আসা
তাসকিন ৩৭ রান দিয়ে
উইকেট শূন্য। সাকিব
২২ রান খরচ করলেও
তাকে উইকেট দেয়নি কিউই
ব্যাটসম্যানরা। মোসাদ্দেক
৩ ওভারে ২৭ রান
দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট।
সৌম্য ১ ওভারে ২১
রান। বাজে
বোলিংয়ের এই ম্যাচে ছিল
বাজে ফিল্ডিংয়ের প্রদর্শনী।
১৯৫ রানের বোঝা নিয়ে
মাঠে নামার আগেই ধাক্কা
খেয়েছিল বাংলাদেশ। ফিল্ডিংয়ের
সময় চোটের কারণে ইমরুল
কায়েসের পরিবর্তে ওপেন করতে মাঠে
নেমেছিলেন সৌম্যকে নিয়ে তামিম ইকবাল। ৪.৪ ওভারে ৪৪
রানের জুটিকে দারুণই বলা
যায়। কিন্তু
পরের চিত্রটা শুধু আক্ষেপের।
২৪ রানে সেট হওয়া
তামিম আউট হলেন, এরপর
৪২ রানে সৌম্য সরকার। রানের
চাপ নিয়ে লড়লেন শুধু
সাকিব। ৪১
রানে তিনিও থামলেন।
মাঝে সাব্বিরের ১৮ ও মাহমুদুল্লাহ
একই রানে আউট হলেন
সেট হয়েও। ১২
রান করে চাপ থেকে
বের হতে পারেননি মোসাদ্দেক। শুধু
অপরাজিত ছিলেন নূরুল হাসান
ও রুবেল হোসেন।
৪ উইকেট হাতে থাকলেও
১৬৭ রানে মুখ থুবড়ে
পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। আগের
দিনই তামিম ইকবাল বলেছিলেন
তাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে। কিন্তু
বিশ্বাসের ফলটা শূন্যই রইলো। পারেন
বলে যে দাবি করেছিলেন
সাব্বির রহমান তারও প্রমাণ
দিতে পারেননি তিনি।
সংক্ষিপ্ত
স্কোর
টস: বাংলাদেশ (ফিল্ডিং)
নিউজিল্যান্ড:
২০ ওভারে ১৯৪/৪
(উইলিয়ামসন ৬০, নিশাম ১৫,
মানরো ০, ব্রুস
৫, অ্যান্ডারসন ৯৪*, গ্র্যান্ডহোম ৪*;
মাশরাফি ০/৪২, তাসকিন
০/৩৭, রুবেল ৩/৩১, সাকিব ০/২২, মোসাদ্দেক
১/২৭, সৌম্য ০/২১)
বাংলাদেশ:
২০ ওভারে ১৬৭/৬
(তামিম ২৪, সৌম্য ৪২,
সাব্বির ১৮, সাকিব ৪১,
মাহমুদুল্লাহ ১৮, মোসাদ্দেক ১২,
নুরুল ৭*, রুবেল ১*;
স্যান্টনার ১/৩৭, হুইলার
০/২৯, বোল্ট
২/৪৮, নিশাম ০/১৭, সোধি
২/২২, ডি গ্র্যান্ডহোম
০/৪, উইলিয়ামসন ১/৯)
ফল: নিউজিল্যান্ড ২৭ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা:
কোরি অ্যান্ডারসন।
0 comments:
Post a Comment