বাংলাদেশকে টেস্টের প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করেও হারের যন্ত্রণা উপহার, বলগুলো
গুনে রাখলে ভালো করতেন
মুশফিকুর রহিম। কয়টা
শর্ট বল নিল ওয়াগনার
তাঁকে দিয়েছেন? কয়টা বাউন্সার মেরেছেন
টিম সাউদি আর ট্রেন্ট
বোল্ট মিলে? কয়টা বল
তাঁর আহত আঙুলকে আরও
থেঁতলে দিতে ছুটে এসেছিল?
কয়টা উঠে আসছিল পাঁজর
ভেঙে দিতে? হেলমেট চুরমার
করে দিতে চেয়েছিল কয়টা
বল?
বাংলাদেশকে টেস্টের প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করেও হারের যন্ত্রণা উপহার |
সাউদির
বাউন্সারে হাসপাতালে যাওয়ার আগে মোট ৫৩টি
বল খেলেছেন মুশফিক। যার
অন্তত বিশটি ছিল ও
রকম ‘মারণাস্ত্র’। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে টেস্ট খেলতে এলে
এ ধরনের বোলিংয়ের সামনে
পড়তেই হবে। কিন্তু
যাঁর হাতের আঙুলে আগে
থেকেই চিড়, চাইলেই যিনি
টেপ মোড়ানো আঙুল নিয়ে চুপচাপ
ড্রেসিংরুমে বসে টেস্টের বাকি
অংশটা পার করে দিতে
পারতেন; ব্যাট হাতে যুদ্ধ
করতে নেমে তাঁরও এমন
বিপদে পড়তে হলো।
ক্রিকেট কখনো কখনো তাই
এমন নিষ্ঠুর। বাংলাদেশের
ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এর আগে
আকরাম খানের শরীরে দাগ
ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মাখায়া
এনটিনির বাউন্সার। সে
রকমই বিষাক্ত তিরের ফলা কাল
ছুটল মুশফিকের দিকে।
বলগুলো
গুনে রাখলে সে জন্যই
ভালো করতেন টেস্ট অধিনায়ক। ভবিষ্যতে
কোনো একদিন সতীর্থদের বলতে
পারতেন, ‘তোমাদের জন্য আমি শরীরে
আঘাতের পর আঘাত নিয়েছি। তোমরা
তো পারলে না আমার
ফেলে আসা কাজটা শেষ
করতে!’
ঘরের মাঠে বাংলাদেশের কাছে
টেস্ট হার মেনে নেওয়া
কঠিন হতো কিউইদের জন্য। ক্রিকেটীয়
রীতির-নীতির মধ্যে থেকে
প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটসম্যানকে যেভাবেই
হোক ঘায়েল করতে তাঁরা
চাইবেনই। মুশফিকও
সেটা জেনেই আগুনে ঝাঁপ
দিয়েছিলেন। আঙুলে
চোট থাকায় পালানোর রাস্তা
তাঁর জন্য খোলা ছিল। তবু
পালাননি। উল্টো
হাসপাতাল থেকে ফিরে ব্যাট
হাতে নামতে চেয়েছিলেন আরেকবার।
কেন সেটা চাইতে হবে
মুশফিককে? বাংলাদেশ দলে ব্যাটসম্যান কি
তিনি একাই? ক্রান্তিকালে হাল
ধরার দায় আর কারও
নেই? দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকে চিন্তা
করুন। পরশু
তামিম ইকবাল আর ইমরুল
কায়েস যখন উইকেটে আসেন,
মুশফিকের ব্যাটিং করা তখনো অনিশ্চিত। এরপর
ঊরুতে চোট পেয়ে ইমরুলও
মাঠ ছাড়ার পর বাংলাদেশ
হয়ে গেল নয়জনের দল। মুশফিক-ইমরুল দুজনের ব্যাটিংই
তখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এটা জেনেও দিনের বাকি
চার-পাঁচটি ওভার উইকেটে
কাটিয়ে আসতে পারলেন না
তামিম! বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারকে লেট
কাট করতে গিয়ে বোল্ড। এক
বল আগেই রিভার্স সুইপে
বাউন্ডারি মেরেছেন। একই
ওভারে দ্বিতীয়বার ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার আগে
মুশফিক আর ইমরুলের কথা
একটু ভাবা উচিত ছিল
তামিমের।
ওয়েলিংটন
টেস্টের নায়ক হতে পারতেন
সাকিব আল হাসান।
প্রথম ইনিংসে নামের পাশে
২১৭ রান। তাঁর
প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি।
দেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি
রানের ইনিংস। মুশফিকের
সঙ্গে রেকর্ড ৩৫৯ রানের
জুটির সঙ্গী। নায়ক
হওয়ার মঞ্চটা যখন এমনই
রঙিন আলোয় সাজানো, শেষ
দিনে সাকিব নিজেই কিনা
সেটা তছনছ করে দিলেন!
মুশফিকের সঙ্গে তাঁদের এ
বড় অন্যায় আচরণ।
স্যান্টনারের
করা দিনের দ্বিতীয় ওভার। প্রথম
চারটি বলেই মনে হলো
এ তো প্রথম ইনিংসের
ঠান্ডা মাথার সাকিবই! একদম
তাড়াহুড়া নেই। কোনোটা
বোলারের একপাশ দিয়ে ঠেলে
দিচ্ছেন। কোনোটা
মিড অন বা আশপাশে। কিন্তু
পঞ্চম বলে যেটা করলেন
সেটা দিয়ে ‘একি করলেন
সাকিব’ জাতীয় একটা আলাদা
প্রতিবেদনই লিখে ফেলা যায়। ইমরুল-মুশফিককে নিয়ে সংশয় ছিল। তামিম,
মাহমুদউল্লাহর পর নাইটওয়াচম্যান মেহেদী
হাসানও আউট হয়ে গেছেন
আগের দিন। ৫৯৫-এর গৌরব বাঁচিয়ে
রাখতে তখন সাকিবের মতো
একজনের উইকেট কামড়ে পড়ে
থাকাটাই ছিল সময়ের দাবি। অথচ
সেই সাকিবই চরম অবিবেচকের
মতো শট খেলে মিড
অনে ক্যাচ হলেন।
প্রথম ইনিংসের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান দ্বিতীয়
ইনিংসে পাঁচ বলে শূন্য!
তাঁর আউট মনে করিয়ে
দিল ইংল্যান্ড সিরিজে চট্টগ্রাম টেস্টে
খেলা সেই অদ্ভুত শটের
কথাই। অবশ্য
কাল সন্ধ্যায় রিজেস ওয়েলিংটনের লবিতে
দেখা সাকিবের গম্ভীর মুখ বলে
দিচ্ছিল, দলকে বিপদে ফেলে
আসায় নিজেকে নিজেই ক্ষমা
করতে পারছেন না।
বাংলাদেশের
আশা-ভরসার সমাধি সাকিবের
ওই আউটেই হয়ে গেছে। সাব্বির
রহমানের একাকী লড়াই তাঁকে
ম্যাচে দ্বিতীয় ফিফটি এনে দিলেও
তাতে দলের লিড খুব
বাড়ল না। ২১৭
রানের লক্ষ্যে এক কেন উইলিয়ামসনের
১৫তম টেস্ট সেঞ্চুরিতেই পৌঁছে
গেছে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশকে
টেস্টের প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে
বেশি রান করেও হারের
যন্ত্রণা উপহার দিয়ে।
রেকর্ড
দিয়ে শুরু ওয়েলিংটন টেস্ট
রেকর্ড দিয়েই শেষ।
তবে সব রেকর্ড তো
আর এক নয়।
শেষের রেকর্ডটি প্রশান্ত মহাসাগরে ডুবিয়ে দিতে পারলেই
ভালো হতো।
0 comments:
Post a Comment