Home » » বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এবার বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে

বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এবার বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে

বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এবার বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪। এবার  বাংলাদেশ ১৩ তম অবস্থানে এসেছে। এ তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে সোমালিয়া ও উত্তর কোরিয়া। এর আগে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় কয়েকবার প্রথম হয়েছিল বাংলাদেশ। ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ ১৪ নম্বর স্থানে চলে গিয়েছিল।
বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এবার বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে
বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এবার বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে
 
গতকাল বুধবার ঢাকায় সংস্থাটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টার টিআইবি এই প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে।

তালিকার নিম্নক্রম অনুযায়ী ১৬৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। একই অবস্থানে আরো রয়েছে গিনি, লাওস, কেনিয়া, পাপুয়া নিউগিনি ও উগান্ডা। তবে ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯তম। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো ১৪৫তম।

ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অগ্রগতি হলেও টিআইবি বলছে, এতে সন্তুষ্ট হওয়ার তেমন কিছুই নেই। দুর্নীতি আগের পর্যায়েই রয়ে গেছে। কারণ, ২০১৪ সালে ১৭৫টি দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিলো। এ বছর সাতটি দেশ তালিকায় নেই। এছাড়া বাংলাদেশের স্কোর ১০০ এর মধ্যে গত বছরের মতো ২৫। সূচক অনুযায়ী ১০০-এর মধ্যে ৪৩ স্কোরকে গড় ধরা হয়। স্কোর ভালো করার সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশ তা করতে পারেনি। বৈশ্বিক গড় স্কোরের তুলনায় ২০১৫ সালে বাংলাদেশের স্কোর অনেক কম। তাই বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা এখনো উদ্বেগজনক। এর আগে ২০০৯, ২০১১, ২০১২ সালেও বাংলাদেশ এই সূচকের ১৩তম অবস্থানে ছিল।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ছয় ধাপ অগ্রগতি কিছুটা সন্তোষজনক মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা হওয়ার কারণ, সাতটি দেশ এবার জরিপের আওতাভুক্ত হয়নি। এসব দেশ সব সময়ই বাংলাদেশের তুলনায় বেশি স্কোর পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এবারো বাংলাদেশের আগে শুধু আফগানিস্তানের অবস্থান। সার্বিক বিবেচনায় এবারও আমাদের অগ্রগতি হয়নি।

তিনি বলেন, যেসব কারণে আমাদের অগ্রগতি হচ্ছে না, তার মধ্যে রয়েছে, সরকার ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু দুর্নীতি বিরোধী উদ্যোগ সত্ত্বেও প্রয়োগ ও চর্চার ঘাটতি। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যকারিতা ও স্বাধীনতা খর্ব করার অপপ্রয়াস যেমন অব্যাহত রয়েছে তেমনি দুদকের নিজস্ব সক্রিয়তা, দৃঢ়তা ও নিরপেক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি দমনে দুদকের রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আরো কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। একইসঙ্গে জবাবদিহিমূলক অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদ কার্যকর হলেই দুর্নীতি কমে যাবে এমনটা মনে করার কিছু নেই। এক্ষেত্রে দুদককে আরো বেশি কার্যকর করতে হবে। রাজস্ব বোর্ড, বিচার বিভাগ, সার্বিকভাবে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনকে দুর্নীতি মুক্ত করাও জরুরি। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্নীতিবাজ ও দুর্নীতির প্রশ্রয়কারীদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তির বিধান করা গেলে দুর্নীতি অনেক কমে আসবে।

টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেন, সিপিআই তালিকায় বাংলাদেশের স্কোর গতবারের চেয়ে না কমায় কিছুটা স্বস্তি পেলেও বসে থাকলে চলবে না। কারণ এখনো গড় স্কোরের কাছাকাছিও পৌঁছানো যায়নি। এছাড়া সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন হলেও উন্নয়নের সঙ্গে দেখতে হবে যে দুর্নীতি কমছে কিনা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ঠিক আছে কি না। গণতন্ত্রের বিনিময়ে উন্নয়ন কতটা গ্রহণযোগ্য, সেটা নিয়েও ভাবার অবকাশ রয়েছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি কমাতে রাজনৈতিক ও সামাজিক সদিচ্ছা জরুরি।

টিআইবির ট্রাস্টি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, সংসদীয় কমিটিগুলো কার্যকর হলে, প্রশাসনযন্ত্র সংসদের জবাবদিহির মধ্যে থাকলে, বিরোধী দল কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারলে এ অবস্থার আরও উন্নতি হতে পারে।

সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, এই সূচক প্রস্তুতের ক্ষেত্রে টিআইবির কোনো ভূমিকা নেই। এমনকি টিআইবির গবেষণালব্ধ তথ্য বা বিশ্লেষণ সিপিআইর জন্য পাঠানো হয় না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের টিআই চ্যাপ্টারের মতোই টিআইবিও দুর্নীতির ধারণা সূচক দেশীয় পর্যায়ে প্রকাশ করে মাত্র। আর সিপিআই সম্পর্কে যথাযথ ধারণার অভাবে বাংলাদেশ বা তার অধিবাসীদের দুর্নীতিগ্রস্ত মনে করা হয়। বাস্তবে দেশের আপামর জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। তারা দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র।

সিপিআই ২০১৫ এর জন্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সূত্র হিসেবে ৭টি জরিপ ব্যবহূত হয়েছে। জরিপগুলো হলোবিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট ২০১৪, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম এক্সিউকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে ২০১৫, বার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশন ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স ২০১৬, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট রুল অব লইনডেক্স ২০১৫, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড ২০১৫, ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস্ ২০১৫ এবং গ্লোবাল ইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস্ ২০১৪ এর রিপোর্ট।


এবারের সূচকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। সূচকে ৯১ স্কোর পেয়ে বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে আছে ডেনমার্ক। এক স্কোর কম পেয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড। আর ৮৯ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে সুইডেন। অন্যদিকে, মাত্র ৮ স্কোর পেয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির দেশ হয়েছে উত্তর কোরিয়া ও সোমালিয়া। এছাড়া ১১ স্কোর পেয়ে এর পরের অবস্থানে আছে আফগানিস্তান এবং ১২ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে সুদান। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান। ৬৫ স্কোর নিয়ে সূচকে এর অবস্থান ২৭।

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts

Blog Archive

Powered by Blogger.