ব্রাজিলের
অস্কার, আর্জেন্টিনার কার্লোস তেভেজ—তারকা ফুটবলারদের
অনেকেই চীনের দিকে ছুটছেন। তাঁদের
আসলে টেনে নিয়ে যাচ্ছে
লোভনীয় সব প্রস্তাব।
চীনের সুপার লিগের ক্লাব
সাংহাই সেনহুয়াতে নাম লিখিয়ে বিশ্বের
সবচেয়ে বেশি বেতনের ফুটবলার
হয়ে গেছেন তেভেজ।
কাকে কখন কোন জায়গা
থেকে ছোঁ মেরে চীনের
ফুটবল নিয়ে নেয় সেই
শঙ্কায় আছে ইউরোপের বড়
বড় ক্লাবগুলো। বিশ্ব
ফুটবলে এখন আলোচনার কেন্দ্রে
তাই চীনের ফুটবল।
তারকা ফুটবলারদের অনেকেই চীনের দিকে ছুটছেন |
সাংহাইয়ে
তেভেজ সই করার পর
বিশ্বের শীর্ষ ফুটবলারদের অনেকেই
চীনের প্রতি আকৃষ্ট হবেন। এশিয়ার
শীর্ষ লিগগুলোতে বিশ্বসেরা ফুটবলারদের আবির্ভাব যে এই প্রথম
ঘটছে—ব্যাপারটা এমন নয়।
অতীতে জাপান, সংযুক্ত আরব
আমিরাত কিংবা কাতারের লিগে
ইউরোপ কিংবা লাতিন আমেরিকার
অনেক খেলোয়াড়ই নাম লিখিয়েছেন।
কিন্তু চীনে তেভেজ, হাল্ক,
অস্কারদের মতো খেলোয়াড়রা নাম
লিখিয়েছেন। তাই
আগের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে এবারেরটা মেলানো
যাবে না। মধ্যপ্রাচ্যের
লিগগুলোতে বুড়িয়ে যাওয়া তারকারা
নাম লিখিয়েছেন অনেকবারই। কিন্তু
চীনে বর্তমান তারকাদের নাম লেখানো ফুটবল
দুনিয়ায় নতুন এক দিগন্ত
শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইউরোপীয়
ক্লাবগুলো একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে
খেলোয়াড় কিনে থাকে।
যে খেলোয়াড়টিকে তারা কেনেন, তাঁকে
কিন্তু কখনোই চুক্তির পুরো
টাকাটা দিয়ে দেওয়া হয়
না। টাকাটা
দেওয়া হয় কিস্তিতে।
এমনভাবে দেওয়া হয়, যেন
বিরাট অঙ্কের টাকা একসঙ্গে
বেরিয়ে না যায়, ক্লাবের
আর্থিক পরিস্থিতির ওপর বাড়তি কোনো
চাপ তৈরি না হয়। রিয়াল
মাদ্রিদ কিংবা বার্সেলোনার মতো
শীর্ষ ক্লাবগুলোর কথা আলাদা।
কিন্তু ইউরোপের বেশিরভাগ ফুটবল ক্লাবগুলোই ব্যবসা
করে টাকা আয় করে
খেলোয়াড়দের সেই টাকা পরিশোধ
করে থাকে। এর
বাইরে যে টাকাটা থেকে
যায়, সেটিই তাদের হাতে
নগদ।
কিন্তু
চীনে নাকি খেলোয়াড়দের চুক্তির
পুরো টাকাই এক সঙ্গে
দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে বিশ্বের
দ্বিতীয় শীর্ষ অর্থনীতির এই
দেশটির ব্যবসায়ীদের কাছে নগদ অর্থের
কোনো অভাব নেই।
তাদের কাছে নাকি এই
পরিমাণ নগদ অর্থ আছে,
যা দিয়ে তারা সারা
দুনিয়া কিনে ফেলতে পারে!
সবচেয়ে বড় কথা চীনের
কমিউনিস্ট সরকার ফুটবলকে বেছে
নিতে চাচ্ছে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে
দেওয়ার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে। যে
দেশে অসম্ভব শক্তিশালী সরকার
ফুটবলের প্রসারকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে, সেখানে
টাকা কোনো সমস্যা হওয়ার
কথা নয়। সে
কারণেই চীনের ফুটবল সাহস
করছে অনেক কিছুরই।
চাইনিজ সুপার লিগে তারকা
ফুটবলারদের নিয়ে এসে সারা
পৃথিবীর দৃষ্টি নিজেদের দিকে
টেনে নেওয়ার এই ব্যাপারটিই
ভাবিয়ে তুলেছে ইউরোপের বিভিন্ন
ক্লাবগুলোকে। আর্সেনাল
কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার তো
বলেই দিয়েছেন, ইউরোপীয় ফুটবল কিন্তু সত্যি
সত্যিই চীনকে নিয়ে ‘চিন্তিত’।
সপ্তাহে
৬ লাখ পাউন্ড বেতন
পেলে অনেক খেলোয়াড়ই চীনে
যেতে চাইবেন। তেভেজকে
দেখে কতজন ঈর্ষায় কাতর
হয়েছেন কে জানে! যে
খেলোয়াড়টিকে সপ্তাহে ৬ লাখ পাউন্ড
বেতন দেওয়া হবে, তাঁর
মাথায় ইতিহাস ঐতিহ্যের ব্যাপারটি
খুব একটা মাথায় থাকার
কথা নয়। মাথায়
থাকার কথা নয় ইউরোপের
শীর্ষ লিগ ছেড়ে আমি
কেন ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের
৯৩তম স্থানে থাকা দেশটির
লিগে খেলতে যাব! মাথায়
থাকবে না যে এই
চীনই মাত্র একবার (২০০২)
বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্তপর্বে খেলার সুযোগ করে
নিতে পেরেছে!
ফুটবল
তো অর্থ-সর্বস্বই।
খেলাটিতে এখন অর্থই সব। তবে
এর মানে এই নয়
যে এখনই চীনের ফুটবল
লিগ বিশ্বের শীর্ষ লিগের একটি। এমন
নয় যে এখনই তারা
স্প্যানিশ লিগ, ইংলিশ প্রিমিয়ার
লিগ, জার্মানির বুন্দেসলিগা, ইতালীয় সিরি ‘আ’
কিংবা ফরাসি লিগ ওয়ানকে
ছাড়িয়ে যাবে। টেলিভিশন
দর্শক টেনে নিয়ে গিয়ে
ইউরোপের লিগগুলোকে ‘পথে বসিয়ে’ দেবে। কিন্তু
অর্থের ঝনঝনানি শুনিয়ে চীনারা যদিও
সত্যি সত্যিই ফুটবলকে নিজেদের
ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাশা মেটানোর লক্ষ্য বানিয়ে থাকে
তাহলে ভাবনার অনেক কারণ
থাকলেও থাকতে পারে।
টেলিভিশন
দর্শক টানা খুব একটা
কঠিন কিছু হবে না
চীনা ফুটবল লিগের।
ভেবে দেখুন তো ক্রিস্টিয়ানো
রোনালদো যদি কোনো দিন
গুয়াংজু এভারগ্রানডে, জিয়াংশু সুনিং, বেইজিং গুয়ান,
শেনজেন কিংবা ডালিয়ান ইফাংয়ের
মতো ক্লাবে খেলার ইচ্ছা
পোষণ করেন তখন কী
হবে! আপনি কি একটিবারের
জন্য হলেও চীনা ফুটবল
লিগ আপনার টেলিভিশন স্ক্রিনে
নিয়ে আসবেন না? আপনি
হয়তো তখন চীনের ফুটবল
লিগ দেখবেন কেবল রোনালদো
খেলেন বলেই!
চীনাদের
লক্ষ্য তো এটিই।
এই কারণেই কাড়ি কাড়ি
টাকা নিয়ে তাঁরা তৈরি
তারকাদের মাথা ঘুরিয়ে দিতে!
চীনা অর্থে ফুটবল তারকাদের
মাথা বিগড়ে যেতেই পারে। তারাও
তো রক্ত মাংসে গড়া
মানুষ!
0 comments:
Post a Comment