Home » , » বন্দুকযুদ্ধে নিহত জঙ্গিনেতা নুরুল ইসলাম মারজানসহ দুজন

বন্দুকযুদ্ধে নিহত জঙ্গিনেতা নুরুল ইসলাম মারজানসহ দুজন

পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজধানীতে জঙ্গিনেতা নুরুল ইসলাম মারজানসহ দুজন নিহত হয়েছেন নিহত অপরজন সাদ্দাম হোসেন বলে জানিয়েছে পুলিশবন্দুকযুদ্ধেনিহত হওয়ার খবর জেনেছে মারজানের পরিবার 
বন্দুকযুদ্ধে নিহত জঙ্গিনেতা নুরুল ইসলাম মারজানসহ দুজন
বন্দুকযুদ্ধে নিহত জঙ্গিনেতা নুরুল ইসলাম মারজানসহ দুজন


মারজানের বাবা নিজামউদ্দীন গতকাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ছেলে কৃতকর্মের ফল পেয়েছে বাবা হিসেবে আমার কোনো দুঃখ নেইতিনি বলেন, ছেলের লাশ ঢাকা থেকে গ্রামে নিয়ে আসার সামর্থ্য তাঁর নেই প্রশাসন যদি লাশ গ্রামে পৌঁছে দেয়, তাহলে তাঁরা দাফনের ব্যবস্থা করবেন
পুলিশ জানিয়েছে, এই মারজান গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় জঙ্গিদের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আর সাদ্দাম রংপুরের জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিসহ উত্তরাঞ্চলে একাধিক জঙ্গি হামলা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন তিনি পাঁচটি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি এবং আরও পাঁচটি হত্যা হত্যাচেষ্টা মামলারও আসামি এই সাদ্দামকে গত বছরের ১৪ এপ্রিল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শ্বশুরবাড়ি থেকে পুলিশ পরিচয়ধারী লোকজন তুলে নিয়ে এসেছিল বলে জানিয়েছেন তাঁর বাবা তাজুল ইসলাম
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, গত জুলাই হলি আর্টিজানে হামলার মাস খানেক পর মারজানকে আটক করা হয় এরপর কয়েক দিন বাস্তবিক অর্থেই মুখ বন্ধ রাখেন মারজান সময় তিনি কথাবার্তাও বলেননি, খাওয়াদাওয়াও বন্ধ রেখেছিলেন গত ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হন মারজানের স্ত্রী আরেফিন প্রিয়তি
এর আগে ১২ আগস্ট ঢাকা মহানগর পুলিশহ্যালো সিটিঅ্যাপের মাধ্যমে মারজানের বিষয়ে তথ্য জানানোর জন্য আহ্বান জানায় ওই দিন তাঁর ছবি প্রকাশ করা হয়
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল রাজধানীতে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘মারজান সাদ্দামকে অনেক দিন ধরে খোঁজ করা হচ্ছিল দুজনই ধরা পড়েছে, নিহত হয়েছে কেউ বাদ যাবে না মুসাও বাদ যাবে না এরা শিগগিরই ধরা পড়বে
বিভিন্ন সময়ে পুলিশি অভিযানে জঙ্গি নিহত হওয়ার পরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয় কিন্তুবন্দুকযুদ্ধেমারজানের নিহত হওয়ার বিষয়ে গতকাল পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি পুলিশের দাবি, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা গত বুধবার রাতে বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি চেকপোস্ট বসান রাত তিনটার দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে তাঁরা সেখানে আসেন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁরা গ্রেনেড ছোড়েন এবং গুলি করেন পরে পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে দুজন নিহত হন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নুরুল ইসলাম মারজান সাদ্দাম হোসেন (নিচে)ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বেড়িবাঁধ এলাকায় এই বন্দুকযুদ্ধ হয় এতে নিহত দুজনের মধ্যে একজন নব্য জেএমবির নেতা মারজান রয়েছেন
ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান মুঠোফোনের এক খুদে বার্তায় সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, একটি ছুরি, একটি মোটরসাইকেল বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে ঘটনায় পুলিশের চার সদস্যও আহত হন
দুজনের লাশ অজ্ঞাতনামা হিসেবে গতকাল দিবাগত রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়
গতকাল রায়েরবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের নম্বর গেটের ১০০ কদম উত্তরে রাস্তার পাশে একটি বটগাছের পাশে ঘটনাস্থলটি বেলা ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মূল রাস্তা থেকে সাত কদম নিচে পাশাপাশি দুটো জায়গায় কিছু রক্ত পড়ে আছে ঘটনাস্থলের ঠিক অপরদিকে রয়েছে চারটি চায়ের টং দোকান তার পেছনে টোকা সাহেব খোকা সাহেবের বস্তি
টোকা সাহেবের বস্তির ছয়জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের রাজিয়া বেগম নামের এক বাসিন্দা বলেন, তিনটা খুব বড় বড় আওয়াজ তিনি শুনতে পেয়েছেন মনে হয়েছে শব্দের সঙ্গে সঙ্গে ঘর কেঁপে উঠেছে প্রথম আওয়াজের পরপরই তাঁর তাঁর আরও দুই বোনের ঘুম ভেঙে যায় তিনি আট থেকে নয়টি ছোট শব্দও শুনেছেন বলে জানান
ইসলাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, শেষ শব্দের পাঁচ মিনিট পর তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তার কাছাকাছি আসেন তিনি তখন রাস্তায় সাদাপোশাকে অনেক পুলিশ দেখতে পেয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র ছিল দু-একজন টর্চ জ্বালিয়ে এদিক-ওদিক আলো ফেলেছিলেন ইসলাম বলেন, লাশ দুটো যে জায়গায় পড়ে ছিল, তার কিছু আগে তিনটিহাইএসগাড়ি এবং তার থেকে কিছু সামনে দুটোহাইএসগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তা দিয়ে কোনো গাড়ি চলাচল করছিল না
মো. হোসেন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, মেয়েকে পোশাক কারখানা থেকে নিয়ে আসার জন্য রাত ঠিক ২টা ৪২ মিনিটে তিনি বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন হাঁটাপথে ঘটনাস্থল থেকে কারখানাটি ১০ মিনিটের রাস্তা তখন রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছিল এবং আশপাশেও তিনি কিছু দেখেননি ঠিক তিনটায় কারখানা ছুটি হওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে দুই মিনিটের মধ্যে তিনি একই পথ দিয়ে বাড়ি ফিরতে চাইলে রাস্তা বন্ধ পান তিনজন লোক রাস্তা আটকে দিয়ে কোনো গাড়ি বা মানুষকে ওই পথ দিয়ে যেতে দেননি
শিবির নেতা থেকে জঙ্গি
নুরুল ইসলাম মারজানের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামে মারজানের বাবার নাম নিজাম উদ্দিন তিনি গেঞ্জির কারিগর মায়ের নাম সালমা খাতুন ১০ ভাইবোনের মধ্যে মারজান দ্বিতীয় ২০১৪ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে গত বছরের জানুয়ারিতে শেষবারের মতো বাড়ি গিয়েছিলেন তখন খালাতো বোন প্রিয়তিকে বিয়ে করেন এরপর স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন
গত ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘নুরুল ইসলাম শিবিরের সাথি ছিলেন
গত সেপ্টেম্বর আরেক সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, তামিম চৌধুরীর পর নব্য জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ নেতা হলেন মারজান মারজানের ওপর নির্ভরতা ছিল তামিমের তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারলে নব্য জেএমবির কাজকর্মে ভাটা পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি
নিখোঁজ ছিলেন সাদ্দাম
সাদ্দামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দে তাঁর বাবা তাজুল আলম মিয়া (আলম জোলা) পেশায় কৃষক মা ছোবেদা বেগম ছয় ভাই, এক বোনের মধ্যে সাদ্দাম পঞ্চম গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোপালচরণ গ্রামের ফারহানা আখতারের (১৭) সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় সাদ্দাম অধিকাংশ সময় শ্বশুরবাড়ি থাকতেন
গতকাল প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি তাঁর বাড়িতে যান সাদ্দামের বাবা তাজুল আলম মিয়া ছবি দেখে নিশ্চিত করেন, লাশটি তাঁর ছেলেরই তাঁর দাবি, নয় মাস আগে সাদাপোশাকে কে বা কারা শ্বশুরবাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় সাদ্দামকে এরপর আর ফিরে আসেননি তিনি
সাদ্দামের ভাই মিজানুর বলেন, ভাইয়ের খোঁজে রাজারহাট থানায় গিয়েছিলেন পুলিশ বলে, তারা জানে না তাজুল আলম মিয়া বলেন, ‘জিডি করতে চাইছিলাম কিন্তু পুলিশ জিডিও নেয়নি
পরিবারের সদস্যরা বলেন, সাদ্দাম পার্শ্ববর্তী কাউনিয়া উপজেলার চর তাম্বুলপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাওটানা ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করার পর লালমনিরহাট সরকারি কলেজে ভর্তি হন ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রেম করে বিয়ে করেন ফারজানা নামের আরেক মাদ্রাসাছাত্রীকে
সাদ্দামের বাবা বলেন, ‘ছেলেকে যদি পুলিশ ধরেই নিয়া যায়, তাহলে বন্দুকযুদ্ধে মরে কেমনে?’ তিনি বলেন, তাঁদের অমতে প্রেম করে বিয়ে করার পর থেকে বাড়িতে থাকতেন না সাদ্দাম সেখানে গিয়ে কোনো জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত ছিলেন কি না, তাঁদের জানা নেই পুলিশ পরিচয়ে সাদ্দামকে ধরে নিয়ে যাওয়ার তিন মাস পরে তাঁর একটি ছেলেসন্তান জন্ম নেয় বর্তমানে সাদ্দামের স্ত্রী সন্তান কোথায় আছে, তা তাঁদের জানা নেই
কুনিও হোশিকে হত্যার পরিকল্পনাকারী
কুনিও হত্যার অভিযোগপত্র থেকে তথ্য জানা যায় যে জাপানি এই নাগরিককে হত্যার টার্গেট, পরিকল্পনা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র গুলি সরবরাহ করেছিলেন সাদ্দাম হোসেন অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সাদ্দামসহ তাঁর সহযোগীরা কুনিওকে হত্যার ১০ দিন আগে থেকে জাপানি নাগরিকের চলাচল গতিবিধির ওপর নজর রাখেন জাপানি নাগরিককে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাদ্দামসহ তাঁর সঙ্গীরা রংপুর শহরের ছোট নূরপুর এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া করে বসবাস করতেন এরপর একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিনে শহর এবং আশপাশের রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে সব রাস্তা চিনতেন
সাদ্দাম যেসব মামলার আসামি
সাদ্দাম সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরাঞ্চলে সংঘটিত পাঁচটি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি এগুলো হলো রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশিও কুনি হত্যা, রংপুরের দরবারের খাদেম রহমত আলী হত্যা, একই জেলার বাহাই সম্প্রদায়ের রুহুল আমিন হত্যা, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ মঠের প্রধান যজ্ঞেশ্বর এবং কুড়িগ্রামের হোসেন আলী হত্যা ছাড়া নিহত সাদ্দাম গাইবান্ধার চিকিৎসক দিপ্তী হত্যা, সাঘাটা উপজেলার রাব্বি হত্যা, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তরুণ দত্ত হত্যা এবং নীলফামারীর কারবালার খাদেম হত্যাচেষ্টা দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের এক চিকিৎসক হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি

{তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক (রংপুর) এবং কুড়িগ্রাম গাইবান্ধা প্রতিনিধি}

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts

Blog Archive

Powered by Blogger.