বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড পুঁজিবাজারে ভূমিকা রাখবে, পুঁজিবাজারের বন্ড মার্কেট উন্নয়নে ‘বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড’ নামে একটি তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এই তহবিল পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াবে, ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজের বাজার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে। মুনাফা করার বদলে এই তহবিলের মূল লক্ষ্য হবে পুঁজিবাজারে
দীর্ঘ মেয়াদে তারল্য সরবরাহ করা। এতে সার্বিক পুঁজিবাজারে
একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
![]() |
বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড পুঁজিবাজারে ভূমিকা রাখবে |
এই তহবিল গঠনের জন্য ‘ফিক্সড ইনকাম (বন্ড) ফান্ড ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ে গত নভেম্বর মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার আহমেদের সভাপতিত্বে
একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠক থেকে বিএসইসির কাছে এই তহবিল গঠনের একটি ধারণাপত্র চাওয়া হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে
ফান্ডটি গঠন, এর বৈশিষ্ট্য
ইত্যাদি সম্পর্কে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে বিএসইসি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে সিকিউরিটিজ
অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ
কমিশন এই ফান্ড সম্পর্কে বলেছে, ‘বর্তমানে মিউচুয়্যাল ফান্ডের আয়ের ওপর ফান্ডকে কোনো আয়কর দিতে হয় না বলে ইউনিট ধারকরা করমুক্তভাবে
মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মুনাফা পায়। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীরা বছরে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ করমুক্তভাবে
পেতে পারে।
ঝুঁকি কমের কারণে এ ফান্ডটি দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক হবে এবং বছরে লভ্যাংশ দেওয়ার হারও বেশি হবে। এ ক্ষেত্রে লভ্যাংশ দেওয়ার ন্যূনতম হার বর্তমান বিধিমোতাবেক ৭০ শতাংশ রয়েছে, তা পরিবর্তন করে ফান্ড গঠনের ধারণাপত্রে
৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ করার শর্ত যুক্ত করা যেতে পারে। এতে পেনশন হোল্ডাররাসহ অন্য বিনিয়োগকারীরা এ ফান্ডে বিনিয়োগ করে নিয়মিত আয় করতে পারবে, যা তাদের জীবনযাত্রার
ব্যয় নির্বাহে সহায়ক হবে। ’
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ফান্ডটি পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহের উদ্দেশ্যে
এবং ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজের বাজার সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করবে বলে ফান্ডটির মুনাফা অর্জনের চেয়ে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি তারল্য সরবরাহই প্রধান লক্ষ্য থাকবে। যেহেতু এ ফান্ডের বিনিয়োগের
বেশির ভাগ অর্থ ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজে
বিনিয়োগ করা হবে, তাই ফান্ডে বিনিয়োগের
ঝুঁকি কম থাকবে। ’
বেমেয়াদি এই ফান্ড সম্পর্কে মাহবুবুল আলম বলেন, বিধি অনুযায়ী এ ফান্ডের অর্থের ৬০ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজার সিকিউরিটিজে
বিনিয়োগ করার শর্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওই অর্থ পুঁজিবাজারে যেকোনো বন্ড, ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ
বা ইক্যুইটিতে
বিনিয়োগ করতে পারবে। বাকি ৪০ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে
নিবন্ধিত নয় এমন ধরনের বন্ড বা ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে।
ফান্ডটি সম্পর্কে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বিএসইসি আরো বলেছে, যেহেতু ফান্ডটি ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের
উদ্দেশ্যে গঠন করা হবে, সেহেতু পুঁজিবাজার
সিকিউরিটিজের বিনিয়োগ সীমার কমপক্ষে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ অর্থ ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজে
বিনিয়োগ করতে হবে। সামগ্রিকভাবে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ অর্থ বন্ড বা ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজে
বিনিয়োগ করতে হবে।
বিএসইসি বলেছে, বাংলাদেশের
পুঁজিবাজার মূলত ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ
নির্ভর। সরকারি বন্ড পরিচিতি এবং বাজারের গভীরতা বাড়াতে ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে
সরকারি ট্রেজারি বন্ড লেনদেন শুরুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির পর কোনো লেনদেন হয়নি। কারণ এখনো বন্ড মার্কেটের জনপ্রিয়তা
তেমন গড়ে ওঠেনি। অর্থ বিভাগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বন্ড মার্কেটের
উন্নয়নের জন্য যৌথভাবে কাজ করছে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য বাজারে ইক্যুইটি সিকিউরিটিজের পাশাপাশি ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজের সরবরাহ বাড়াতে হবে।
0 comments:
Post a Comment